আজকে আমরা জানব উচ্চ রক্তচাপ কী, উচ্চ রক্তচাপের লক্ষন, কিভাবে বুঝবেন যে আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপের কারন,উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের উপায়।
উচ্চ রক্তচাপ কী?
হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ, হাই ব্লাড প্রেশার বা হাইপারটেনশন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সিস্টোলিক প্রেশার ও ডায়াস্টলিক প্রেশার এ দুইটি মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয়। যেই মানের সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার, আর যেই মানের সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে (সিস্টোলিক প্রেশার - ১২০ ও ডায়াস্টলিক প্রেশার -৮০ ) ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষন
কিভাবে বুঝবেন যে আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে?
এক সপ্তাহে ৩ বার বিভিন্ন সময়ে অন্তত ৫ মিনিট বসে থাকার পর আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ বা তার বেশি হয় তবে আপনি উচ্চরক্ত চাপে ভুগছেন বলে নিশ্চিত করা যায় । অন্যদিকে রক্তচাপের রিডিং যদি ৯০/৬০ বা তার আশেপাশে থাকে তবে আপনি নিন্মরক্ত চাপে ভুগছেন বলে নিশ্চিত করা যায়
”বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮”-এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন (শতকরা হিসেবে ,শতকরা ২৫ শতাংশ লোক) উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।
বেশির ভাগই উচ্চ রক্তচাপের কোন লক্ষন থাকেনা, তবে সাধারন কিছু লক্ষন বিদ্যমান থাকেঃ
লক্ষন
- প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো বা মাথা ভারি লাগা
- মাথা ব্যথার সাথে চোখে ব্যাথা বা ঝাপসা দেখা
- অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপুুনি
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- ঘাড় ব্যথা করা
- রাতে ভালো ঘুম না হওয়া / অনিদ্রা
- নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া অথবা নাক দিয়ে রক্ত পড়া
- অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
উচ্চরক্ত চাপের কোন লক্ষন থাকেনা বলেই অনেকেই জানেন না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, আর এজন্যই একে “নিরব ঘাতক”বলা হয়
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা
উচ্চ রক্তচাপের ফলে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার সৃস্টি হয়। যেমন ব্রেন স্ট্রোক বা রক্তক্ষরন, হার্ট অ্যাটাক, চোখের সমস্যা, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মূলত এই চারটি অঙ্গেরই ক্ষতি হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী আনুমানিক 1.13 বিলিয়ন মানুষের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ (দুই-তৃতীয়াংশ) নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে বাস করেন।
আমেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলোজি ইনফরমেশন (NCBI) এর মতে অনুমান করা হয় যে বিশ্বব্যাপী প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১.৫ বিলিয়নে।
উচ্চ রক্তচাপের কারন
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতা
- নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক, কায়িক পরিশ্রম না করলে
- প্রতিদিন অতিরিক্ত (ছয় গ্রাম অথবা এক চা চামচের বেশি) লবণ খেলে বা কাচা লবন খেলে।
- পরিবারের ইতিহাসে কারও যেমনঃ বাবা-মা, ভাই-বোনের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
- ধূমপান বা মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য/পানীয় খেলে
- দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে
- শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে
আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (CDC) এর তথ্য অনুযায়ী 2018 সালে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মৃত্যুর জন্য উচ্চ রক্তচাপকে প্রাথমিক বা সহায়ক কারণ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রনের উপায়
- লবণ খাওয়া কমাতে হবে (কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে)।
- ওজন বেশি হলে ওজন কমাতে হবে।
- নিয়মিত হাঁটাচলা, শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করতে হবে।
- ধূমপান / মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য/পানীয় অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
- মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কমাতে হবে
- ডায়াবেটিস থাকলে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহন করুন।
যেসব খাবারে উচ্চরক্তচাপ কমে
যে সকল মানুষজন উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন তারা নিয়মিত প্রতিদিন ২ কোয়া করে রসুন খান, ১০০% আরাম পাবেন। দয়া করে দেখুন, রসুন ন্যাচারাল এন্টি বায়োটিক।
রসুন:- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে রসুনের ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এক টুকরাে রসুন কোয়া খেলে আপনার কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রনে থাকে। এর ফলে রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকে।
গাজর: হাই ব্লাডপ্রেশার কমাতে চাইলে আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন গাজর। গাজরের রস করে খেতে পারেন।আরও ভালাে ফল চাইলে পালং শাকের সঙ্গে গাজরের মিশ্রণ বানিয়ে খেতে পারেন।
পিয়াজ ও মধু:- রূপচর্চার পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনেরও সমান কার্যকরী পিয়াজ ও মধু। এক চা চামচ পিয়াজের রসের সঙ্গে ২ চা চামচ মধু মেশান। নিয়মিত মিশ্রনটি খান। উপকার পাবেন। ঘরােযা উপায়ে এই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন তবে চিকিৎসকের পরামার্শ নিতে ভূলবেন না।
ডাঃ মোঃ আঃ হান্নান মিয়া (বি,এ)
ডি.এইচ.এম.এস (ঢাকা)
অহনা ভিলা, ধানুয়া কলেজ পাড়া, শিবপুর, নরসিংদী
সিংহশ্রী (বট তলা) চৌরাস্তা, ফালুমাস্টারের বাড়ি, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
মোবাইলঃ ০১৭৩৯-৬৮২৬৯২, অথবা বার্তা পাঠান
(প্রতি শনিবার যোগাযোগ সাপেক্ষে রোগী দেখা হয়)
Share this post
https://bismillahhomeocare.com/উচ্চ-রক্তচাপ-বা-হাই-ব্লাড-প্রেসারের-লক্ষন-কারন-জটিলতা-করনীয়-বা-প্রতিকার-20