খেজুর আমাদের অতি পরিচিত ফল। বিশেষ করে রমজান মাসে ধর্মপ্রান মুসলিমদের ইফতারে খেজুর না হলে যেন চলেই না, এর একটি কারন হতে পারে যে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে খেজুর। আমরা জানি যে খেজুর খাওয়া সুন্নত, আবার এই একটি সুন্নতের সাথেও আছে অনেক উপকারিতা আর সেসব উপকারিতা আমরা অনেকেই জানি না, জানলেও হয়তো বা খুব কম। আর খেজুরের সেই সব উপকারীতা নিয়ে আজকের পোষ্ট।
খেজুরে যেসব উপকারী উপাদান রয়েছে
খেজুরে আছে পানি, ভিটামিন ‘বি-১’, ভিটামিন ‘বি-২’, আমিষ, শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, খনিজ পদার্থ, আয়রণ ও সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ‘সি ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার।
খেজুর মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল, খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
খেজুরের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা
- রোজায় দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকার কারণে দেহে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। শরীরের এই প্রয়োজনীয় গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে খেজুর। তাই প্রতিদিন ইফতারে খেজুর খাওয়া উচিত।
- হৃদরোগ প্রতিরোধ - খেজুরে বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেগিয়েছে যে, খেজুর শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় (LDL) কমাতে এবং ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট - খেজুরে কোন কোলেস্টেরল এবং বাড়তি পরিমাণে চর্বি থাকে না। তাই আপনি যখন খেজুর খাওয়া শুরু করবেন তখন সহজেই অন্যান্য ক্ষতিকর ও চর্বি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
- আয়রন - আয়রন মানব দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খেজুর প্রচুর আয়রন রয়েছে। ফলে এটা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই যাদের দুর্বল হৃৎপিণ্ড, তাদের জন্য খেজুর হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ ঔষধ।
- খেজুরে আছে প্রচুর শক্তি, এমিনো এসিড, শর্করা ভিটামিন ও মিনারেল। শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনেরও জোগান দেওয়া ও ক্লান্তি দূর করার ক্ষেত্রেও খেজুরের গুরুত্ব অপরিসীম।
- ভিটামিন - খেজুরে রয়েছে বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫ এর মত অত্যন্ত দরকারি ভিটামিন, যা শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক।
- এছাড়াও ভিটামিন এ১ এবং সি ভিটামিন পাওয়ার অন্যতম একটি সহজ উৎস হচ্ছে খেজুর।
- সেই সাথে খেজুর দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর অত্যন্ত কার্যকর।
- ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। যা হাড়কে মজবুত করে। খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে।
- প্রোটিন- আমাদের শরীরের জন্য প্রোটিন অত্যাবশ্যকীয় একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। খেজুর হল প্রোটিন সমৃদ্ধ। ফলে আমাদের পেশী গঠন করতে সহায়তা করে এবং শরীরের জন্য খুব অপরিহার্য প্রোটিন সরবরাহ করে।
- বীর্য গাঢ়ঃ খেজুর বীর্যকে ঘন করতে সাহয্যে করে। তাই প্রতিদিন খালি পেটে ৩-৫ টি খেজুর খান।
- শুক্রানু তৈরিঃ এছাড়াও এটি শুক্রানু তৈরিতেও দারুন ভূমিকা পালন করে।
- যৌন চাহিদা স্বাভাবিকঃ এটি যৌন শক্তিকে নরমাল রাখে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ - খেজুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা যায়, খেজুর পেটের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আর যারা নিয়মিত খেজুর খান তাদের বেলায় ক্যান্সারে ঝুঁকিটাও কম থাকে। খুব সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা যায় যে খেজুর Abdominal ক্যান্সার রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং অবাক করা বিষয় হচ্ছে এটি অনেক সময় ওষুধের চেয়েও ভাল কাজ করে।
- ওজন হ্রাস - মাত্র কয়েকটা খেজুরেই ক্ষুধা নিবারন হয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। ক্ষুধা নিবারনকারী এই কয়েকটা খেজুরই শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্যে করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। কখনও কখনও ডায়রিয়ার জন্যেও এটা অনেক উপকারী।
- সংক্রমণ - যকৃতের সংক্রমণে খেজুর বেশ উপকারী। এছাড়া গলা ব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি-ঠাণ্ডায় খেজুর উপকারী।
- অ্যালকোহল জনিত বিষক্রিয়ায় খেজুর বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে।
- রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ - খেজুরে প্রচুর মিনারেল সঙ্গে আয়রন থাকার কারণে রক্তশূন্যতা রোধ করে, তাই যাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তারাও নিয়মিত খেজুর খেয়ে দেখতে পারেন।
- কর্মশক্তি বাড়ায় - খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খেজুর খুব দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সারাদিন রোজা রাখার পর মাত্র ২টি খেজুরেই খুব দ্রুত কেটে যাবে রোজাদারদের ক্লান্তি।
- স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায় - খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকার কারণে এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি করে সাথে স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
- একটি পরিসংখ্যানর হিসাব অনুযায়ী, যেসব ছাত্র-ছাত্রী নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভাল থাকে।
- চেহার লাবণ্যঃ তাছাড়াও খেজুরে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা চেহারার লাবণ্য ধরে রাখে, ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখে, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় ও চুল পড়া রোধ করে।
খেজুরের উপকারিতাগুলো তো জানা হলোই, তাই শুধু রমজান মাসে বা রোজতেই নয়, সব সময়ই আমাদের সবার খেজুর খাওয়া উচিত।
ডাঃ মোঃ আঃ হান্নান মিয়া (বি,এ)
ডি.এইচ.এম.এস (ঢাকা)
অহনা ভিলা, ধানুয়া কলেজ পাড়া, শিবপুর, নরসিংদী
রোগী দেখার সময়ঃ শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
বাগদী প্রাইমারী স্কুলের পূর্ব পার্শ্বে, আব্দুল বাতেনের বাড়ি, কালিগঞ্জ, গাজীপুর
রোগী দেখার সময় বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
মোবাইলঃ ০১৭৩৯-৬৮২৬৯২, অথবা বার্তা পাঠান
(প্রতি শনিবার যোগাযোগ সাপেক্ষে রোগী দেখা হয়)
Share this post
https://bismillahhomeocare.com/খেজুরের-পুষ্টিগুন-ও-উপকারিতা-7