আজকে আমরা অর্জুন গাছের উপকারিতা সর্ম্পকে জানব।
ভেষজ শাস্ত্রে ওষুধি গাছ হিসেবে অর্জুনের ব্যবহার অগণিত। বলা হয় বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর একজন চিকিৎসক থাকা একই কথা। এর ওষুধি গুণ মানবসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সুপ্রাচীনকালেই। শারীরিক বল ফিরিয়ে আনা এবং রণাঙ্গনে মনকে উজ্জীবিত করার ভেষজ রস হিসেবে অর্জুন ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে মহাভারত ও বেদ-সংহিতায়। তারপর যত দিন যাচ্ছে অর্জুনের উপকারী দিক উদ্ভাসিত হচ্ছে। নিচে অর্জুনের কিছু উপকারীতা বর্ণনা করা হলো-
অর্জুন গাছের উপকারীতা
হৃদরোগ : অর্জুনের প্রধান ব্যবহার হৃদরোগে। অর্জুন-ছালের রস কো-এনজাইম কিউ-১০সমৃদ্ধ। এ কো-এনজাইম কিউ-১০ হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে। বাকলের রস ব্লাড প্রেসার ও কলেস্টেরল লেভেল কমাতে সাহয্য করে। অর্জুনের ছাল বেটে রস খেলে হৃৎপিন্ডের পেশি শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ে। DOS থেরাপি অনুযায়ী অর্জুন ফল দেখতে মানব দেহের হৃদপিন্ডের মতো তাই অর্জুনকে হৃদরো গের মহৌষধ বলা হয়।
অ্যাজমা : অর্জুন-ছালের পাউডার ১২ গ্রাম দুধের ক্ষীর বা পায়েসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা রোগের স্থায়ী সমাধান হবে।
ক্ষয়কাশে : অর্জুন-ছালের গুঁড়া বাসক -পাতার রসে ভিজিয়ে শুকিয়ে রাখতেন প্রাচীন বৈদ্যেরা। দমকা কাশি হতে থাকলে একটু ঘি ও মধু বা মিছরির গুঁড়া মিশিয়ে খেতে দিতেন। এতে কাশির উপকার হতো।
হাড় মচকে গেলে বা চিড় খেলে : অর্জুন-ছাল ও রসুন বেটে অল্প গরম করে মচকানো জায়গায় লাগিয়ে বেঁধে রাখলে সেরে যায়। তবে সেই সঙ্গে অর্জুন-ছালের চূর্ণ ২-৩ গ্রাম মাত্রায় আধা চামচ ঘি ও সিকি কাপ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভালো হয়।
ত্বকের পরিচর্যা : ত্বকে ব্রণের ক্ষেত্রে অর্জুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছালের চূর্ণ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্রণের ওপর লাগালে খুব দ্রুত উপকার হয়। এ ছাড়া ছালের মিহি গুঁড়া মধু মিশিয়ে লাগালে মেছতার দাগ দূর হয়।
বুক ধড়ফড় : যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই তাদের পক্ষে অর্জুন-ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০ মিলি পানির সঙ্গে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মিলি থাকতে ছেঁকে বিকালবেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি অবশ্যই কমবে। তবে পেটে যেন বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লো ব্লাড প্রেসারে উপযুক্ত নিয়মে তৈরি করে খেলেও অবশ্য প্রেসার বাড়বে।
রক্ত আমাশয়ে: ৪-৫ গ্রাম অর্জুন ছালের ক্বাথে ছাগলের দুধ মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়: ডায়রিয়া বা পেটের অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে অর্জুনের ছাল ৪৫-৩০ গ্রাম করে খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও অসুবিধা দূর হয়।
মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির প্রদাহে : অর্জুনের ছাল এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মাড়ির রক্তপাতও বন্ধ করে। এছাড়াও অর্জুন ছাল সংকোচক ও জ্বর নিবারক হিসেবেও কাজ করে।
রক্তপিত্তে : মাঝেমধ্যে কারণে-অকারণে রক্ত ওঠে বা পড়ে সে ক্ষেত্রে ৪-৫ গ্রাম ছাল রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে পানিটা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
ব্রণ: যৌবনে কালো ব্রণ সমস্যা খুবই স্বভাবিক। এক্ষেত্রে অর্জুনের ছাল/বাকল চূর্ণ মধুর সাথে মিশিয়ে পেষ্টের মতো লাগালে ব্রণ সমস্যার উন্নতি হবে।
হজম সহায়ক: অর্জুন ছালের রস পেট ফাঁপা, বদহজম, অগ্নিমন্দা জাতীয় অসুবিধায় ব্যবহার করা যায়। এটি খাদ্যদ্রব্যের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ও পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখে।
ফোঁড়া: ফোঁড়া হলে পাতা দিয়ে ঢেকে রাখলে ফোঁড়া ফেটে যায়, তারপর পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
কানের ব্যথায়: কানের ব্যথায় অর্জুন ব্যবহার করা হয়। কচি পাতার রস কানের ভিতরে দুই ফোঁটা করে দিলে কানের ব্যথা ভালো হয়।
রক্তপাত বন্ধ: কাটা ঘায়ের ক্ষেত্রে অর্জুন ছাল বেটে প্রলেপ দিলে বা অর্জুনের রস বা অর্জুন ফলের চুর্ণ ক্ষতস্থানে লাগালে রক্তপাত বন্ধ হয়।
ক্ষত বা ঘা : শরীরে ক্ষত বা ঘা হলে, খোস-পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুন-ছালের ক্বাথ দিয়ে ধুয়ে ছালের মিহি গুঁড়া পানি দিয়ে মিশিয়ে লাগালে দ্রুত ঘা সেরে যায়।
জ্বর নিবারক: জ্বর নিবারক হিসেবেও অর্জুনের ছালকে ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
যৌনরোগ : যাদের মধ্যে যৌন অনীহা দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে অর্জুনের ছালচূর্ণ উপকারী। এ ছালচূর্ণ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত খেলে এ রোগ দূর হয়। এ ছাড়া যাদের শুক্রমেহ আছে তারা অর্জুন-ছালের গুঁড়া ৪-৫ গ্রাম ৪-৫ ঘণ্টা আধা পোয়া গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর ছেঁকে ওই পানির সঙ্গে এক চামচ শ্বেতচন্দন মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। এটা সুশ্রুতসংহিতার কথা।
এ ছাড়াও যাদের স্বপ্নে বীর্যস্খলন হয় অথবা যাদের কম উদ্দীপনা ছাড়াই বার বার বীর্যস্খলন জাতীয় সমস্যা আছে তারাও অর্জুন গাছের ছাল সেবন করতে পারেন। এক্ষেত্রে ৪-৫ গ্রাম পরিমান অর্জুন ছালের গুড়া এক গ্লাস পরিমান (১২৫ এমএল) গরম পানিতে ৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ঐ পানির সাথে এক চামচ শ্বেত চন্দন যোগ করতে হয়। এই মিশ্রণ নিয়মিত খেলে অকাল বীর্যস্খলন সমস্যার উপকার হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধক: অর্জুনের ছাল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। কাজেই ক্যান্সার রোগীর আয়ু বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও এর রয়েছে অনেক ঔষধিগুণ। ইদানিং অর্জুন গাছের ছাল থেকে ‘অর্জুন চা’ তৈরি হচ্ছে যা হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। DOS থেরাপি অনুযায়ী অর্জুন ফল দেখতে মানব দেহের হৃদপিন্ডের মতো তাই অর্জুনকে হৃদরোগের মহৌষধ বলা হয়।
অর্জুন গাছের ব্যবহার
অর্জুন গাছের প্রায় সব অংশ বিভিন্ন ভাবেই ব্যবহার হয়। যেমনঃ
- ছাল, পাতা ও ফলের ব্যবহার চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভেষজ ওষুধ হিসেবে।
- অর্জুনের কাঠ শক্ত প্রকৃতির হওয়ায় গৃহনির্মাণ, কৃষি উপকরণ,জলযান, নৌকা,দাড়, মাস্তুল, খনি ও নলকূপ খননে এই গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়। এক সময় গরুর গাড়ির চাকা নির্মাণে ব্যবহৃত হতো।
- এর ছাল/বাকল থেকে যে ট্যানিন পাওয়া যায়, তা চামড়া শিল্পে প্রক্রিয়া জাত কাজে ব্যবহার করা হয়।
- অর্জুন গাছের পাতা তসর রেশম পোকার খাদ্য হওয়ায় এটি রেশম শিল্পের সহায়ক।
অর্জু নের অন্যান্য ব্যবহার
- অর্জুনের ছাল হাপানী রোগেও উপকারী।
- হাড় ভেঙ্গে গেলে অর্জুন ছাল বেটে প্রলেপ দিলে ভাঙ্গা হাড় দ্রæত জোড়া লাগে। তবে প্রলেপ দেওয়ার পূর্বে ভাঙ্গা অস্থিগুলোকে যথাস্থানে পুন:স্থাপন করা উচিৎ।
- স্ত্রীলোকের শ্বেত বা রক্তপ্রদর জাতীয় সমস্যায় অর্জুনের ছাল ভিজানো পানি আধ চামচ কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- অর্জুনের ৫ গ্রাম পরিমান কাঁচা ছাল ভালভাবে পিষে ঠান্ডা পানিসহ দিনে ২ বার সেবন করলে রক্ত আমাশয়ে উপকার হয়।
অর্জুন ছাল ও রসুন বেটে অল্প গরম করে ওখানে লাগিয়ে বেঁধে রাখলে ওটা সেরে যায়। তবে সেই সঙ্গে অর্জুন ছালের চূর্ণ ২ থেকে ৩ গ্রাম মাত্রায় আধ চামচ ঘি ও সিকি কাপ আন্দাজ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভাল হয়।
- শ্বেত বা রক্তপ্রদরে: উপরিউক্ত মাত্রা মতো ছাল ভিজানো জল আধা চামচ, আন্দাজ কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেলে উপশম হয়।
- ক্ষয় কাসে বা যক্ষ্মায়: অর্জুন ছালের গুঁড়ো, বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে, সেটা শুকিয়ে নিতে হবে অন্ততঃ সাত বার। দমকা কাসি হতে থাকলে একটু ঘৃত ও মধু বা মিছরির গুঁড়ে মিশিয়ে চাটতে হবে।
- মেশতায়: অর্জুন ছালের মিহি গুঁড়ো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে লাগালে ও দাগগুলি চলে যায়।
- পদ্মকাঁটায়: অর্জুন ছাল টক ঘোলে ঘষে লাগালে সেরে যাবে।
-
পুঁজস্রাবী ঘা বা ক্ষত: অর্জুন ছালের ক্বাথে ধুয়ে, ঐ ছালেরই মিহি গুঁড়ো ঐ ঘায়ে ছড়িয়ে দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
-
ফোড়া: অর্জুনের পাতা দিয়ে ঢাকা দিলে ওটা ফেটে যায়, তারপর ঐ পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
-
হাঁপানীতে (Cardiac): অর্জুনের ফলের শুষ্ক টুকরো কলকে করে তামাকের মতো ধোঁয়া টানলে হাঁপের টান কমে যাবে।
স তর্কতা:
অর্জুন গাছ থেকে উৎপাদিত চিকিৎসা গ্রহণে তেমন কোন বিধি নিষেধ নেই, তবে উচ্চ রক্তচা প রোগীদের (হাই ব্লাড প্রেসার) সতর্কতা অবলম্বন শ্রেয় ।
তথ্যসূত্রঃ
হৃদরোগের মহৌষধ অর্জুন - বাংলাদেশ প্রতিদিন
অর্জুন গাছের পনেরোটি উপকারিতা ও ভেষজ গুণাগুণ - রোদ্দুরে
অর্জুন আমাদের হৃদপিন্ডের অভিভাবক, আমরা কি চিনি? - কৃষক ডট কম ডট বিডি
ডাঃ মোঃ আঃ হান্নান মিয়া (বি,এ)
ডি.এইচ.এম.এস (ঢাকা)
অহনা ভিলা, ধানুয়া কলেজ পাড়া, শিবপুর, নরসিংদী
রোগী দেখার সময়ঃ শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
বাগদী প্রাইমারী স্কুলের পূর্ব পার্শ্বে, আব্দুল বাতেনের বাড়ি, কালিগঞ্জ, গাজীপুর
রোগী দেখার সময় বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
মোবাইলঃ ০১৭৩৯-৬৮২৬৯২, অথবা বার্তা পাঠান
(প্রতি শনিবার যোগাযোগ সাপেক্ষে রোগী দেখা হয়)
Share this post
https://bismillahhomeocare.com/অর্জুন-গাছ-বাকল-ফল-ও-মূলের-অসাধারন-গুনাগুন-ও-উপকারীতা-31