আজকে আমরা গলগন্ড বা ঘ্যাগ রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সর্ম্পকে জানব।
গলগন্ড কি
থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকেই গলগণ্ড বা গয়টার বলা হয়। এই থাইরয়েড গ্রন্থি দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মত, যা গলার গোড়ায়, ল্যারিনক্স (পুরুষের অ্যাডামস আপেল)–এর ঠিক নিচে অবস্থিত। থাইরয়েড গ্রন্থির ফোলা যা ঘাড় বা স্বরযন্ত্রকে ফুলিয়ে দেয়।
গলগন্ড রোগের হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
- থাইরয়েডিনাম (Thyroidinum) গলগন্ড রোগের প্রধান ও উত্তম ঔষধ। হৃৎপিন্ডের দুর্বলতা,বুক ধড়ফরানি,দিন দিন শরীর শুকিয়ে যায় নরম তুলতুলে গ্ল্যান্ড। সহ জড় বৃদ্ধি, গ্রস্থি সমূহ স্ফীত ও পাথরের মত শক্ত। এরূপ লক্ষনে থাইরয়েডিনাম (Thyroidinum) শতভাগ কার্যকরী।
- আয়োডিয়াম (Iodium) - আয়োডিনের অভাব জনিত গলগন্ড চিকিৎসায় আয়োডিয়াম (Iodium) CM ২ ডোজ , ১ মাস পর পর।গ্ল্যান্ড ফুলিয়া গেলে বিহীন শক্ত, যন্ত্রনা / ব্যাথাবিহীন হলে আয়োডিন উপযোগী। রোগী অত্যন্ত গরমে কাতর ,ঠান্ডা সে ভালোবাসে,ঠান্ডায় উপশম। এধরনের রোগী প্রচুর ক্ষুদা এবং খায়ও প্রচুর কিন্তু শরীর দিন দিন শুকিয়ে যায়, সামান্য পরিশ্রমেই ঘাম হয় । কোমল অথবা কঠিন আকারের গলগন্ড, দুর্বলতা। এরূপ লক্ষনে আয়োডিয়াম (Iodium) শতভাগ কার্যকরী।
- স্পঞ্জিয়া (Spongia) - যেসব শিশু জন্ম হতেই থায়রয়েড গ্ল্যান্ডের স্ফীতি বা গলগন্ড বা ঘ্যাগ নিয়েই জনুগ্রহণ করে স্পঞ্জিয়া (Spongia)। গলগন্ড রোগের উৎকৃষ্ট ঔষধ।গ্ল্যান্ড বড় ও শক্ত।মাঝে মাঝে রোগী ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হইবার উপক্রম হয়। কঠিন, অতিশয় বড় গলগন্ড, শুলবৃদ্ধ বেদনা, রাত্রে কাশি এবং শাসকষ্ট, গরম পানীয়ে উপশম। এরূপ লক্ষনে স্পঞ্জিয়া (Spongia) শতভাগ কার্যকরী।
- নেট্রাম মিউর (Natrum Mur) লবনপ্রীয় রোগীর জন্য উপযোগী। ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না, গরম প্রিয় ,সামান্য মাত্র ঠান্ডা লাগিলেই সর্দি হয়। প্রচুর ক্ষুদা, কিন্তু খাবার দাবার অনিচ্ছা, শরীর শুকিয়ে যায়, নারীদের মাসিকের সময় বা আগে পরে মাথাব্যাথা
- ক্যালকেরিয়া কার্ব (Calcarea Carb) - গলগন্ড ধাতুযুক্ত রােগীর পক্ষে উপযােগী, অতি উৎকৃষ্ট এ্যান্টিসােরিক, ধাতু দোষ সংশােধক। - ফলাফল ৯৫%
- ফাইটোলক্কা (Phytolacca) - গলার ডানদিকের গ্রস্থির স্ফীতি, বর্ষাকালে বা রাত্রে বেদনার বৃদ্ধি, ব্যথা, টাটানি, অস্থিরতা, অবসন্নতা। - ফলাফল ৯৫%
- ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকা (Calcarea Fluor) - প্রস্তরের ন্যায় গ্রস্থি শক্ত, শারীরিক-অসুস্থতা, গলায় বদেনা ও
জ্বলাপােড়া, উষ্ণ পানীয়ে উপশম, ঠান্ডা পানীয়ে বৃদ্ধি। ফলাফল ৯০%
গলগন্ড বা ঘ্যাগ রোগের বায়োকেমিক ঔষধ
- গলগন্ড পীড়ায় ম্যাগ ফস 200x (Mag Phos 200x) শক্তি অপরিহার্য।
- ক্যালকেরিয়া ফস (Calc. Phos) গলগন্ডের জন্য ইহাই প্রধান ঔষধ। রক্তহীন / রক্তসল্পতা রোগীর গলগন্ড হলে ক্যালকেরিয়া ফস উপযোগী। গলগন্ডের মাঝে অন্ডলালা বিদ্যমান থাকলে ক্যালকেরিয়া ফস উপকারী।মাত্রা ২০০X প্রয়োগ প্রয়োজন। দুর্বল রক্তহীন, ফেকাসে গলগন্ড রােগীদের ক্যালকেরিয়া ফ্লোর ও ক্যালকেরিয়া ফস একত্রে 200x ৪+৪=৮ গরম জলে সকালে ও রাতে সেবনে ভাল ফল পাওয়া যায়।
- শরীরে অম্লরস বৃদ্ধি পেলে নেট্রাম ফস (Natrum Phos) পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করলে গলগন্ড রোগ আরোগ্য হয়।
- ক্যালকেরিয়া ফ্লোর (Calcarea Fluor) - গলগন্ড যখন পাথরের মত শক্ত উচু ও পুরাতন হয় তখন 200X ৫টা করে বড়ি গরম জলে সকাল ও সন্ধ্যায় কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আয়ােডিন মাদার টিংচার গলায় লাগানাে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।
গলগন্ড বা ঘ্যাগ রোগের ঘরোয়া টিপস
থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে tyrosine দরকার হয়, তাই উচ্চ মানের tyrosine প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। খাদ্যঃ লাল মাংস, মাছ, মুরগির ডিম ও মাংস, কলা ও মিষ্টি কুমড়ার বিচি।
আপনার থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে কোনও ভাবেই চিনি খাবেন না। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে T3 ও T4— এই দুটি হরমোন উত্পন্ন হয়ে। যা স্বাস্থ্য়ের পক্ষে খারাপ। এছাড়াও দুধ, দই, ছানা, চিনি, পিঠা, ও মধু্ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন
মাংস, ডিম, টক, গুরুপাক দ্রব্য চিংড়ী মাছ, ঠান্ডা খাবার নিষেধ।
goitogenous খাবার যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, সীম, চীনাবাদাম, সয়াসস, ইত্যাদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবে না। রান্না করে খাবেন, কাঁচা খাবেন না। আর থাইরয়েড এ সমস্যা থাকলে এসব খাবার খাওয়া উচিত নয়।
immune system কে ঠিক রাখার জন্য gluten প্রোটিনযুক্ত খাবার খাবেন। খাদ্যঃ গম, শস্যদানা, যব, বার্লি খেতে হবে।
থাইরয়েড ঠিক রাখার জন্য লিভারের সুস্থতা দরকার। কেননা এখানেই T4, T3 convert হয়। আর লিভারের সুস্থতার জন্য ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার খেতে হবে। খাদ্যঃ বিভিন্ন তেলযুক্ত মাছ, কাঁচা বাদাম, অলিভওয়েল এ পাওয়া যাবে।
প্রয়োজনীয় আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড রোগ হয় তাই আয়োডিন যুক্ত লবণ খাবেন।
যারা রাত জেগে থাকে তাদের থাইরয়েডের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার বেশি আশঙ্কা দেখা যায়। থাইরয়েড সমস্যা দূর করতে হলে আপনার ঘুমের খুবই প্রয়োজন । তবে যাদের রাতে কাজ থাকে তারা দিনের বেলায় ঘুমিয়ে পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতি মেটাতে পারে।
ডাঃ মোঃ আঃ হান্নান মিয়া (বি,এ)
ডি.এইচ.এম.এস (ঢাকা)
অহনা ভিলা, ধানুয়া কলেজ পাড়া, শিবপুর, নরসিংদী
রোগী দেখার সময়ঃ শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
বাগদী প্রাইমারী স্কুলের পূর্ব পার্শ্বে, আব্দুল বাতেনের বাড়ি, কালিগঞ্জ, গাজীপুর
রোগী দেখার সময় বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
মোবাইলঃ ০১৭৩৯-৬৮২৬৯২, অথবা বার্তা পাঠান
(প্রতি শনিবার যোগাযোগ সাপেক্ষে রোগী দেখা হয়)
Share this post
https://bismillahhomeocare.com/গলগন্ড-বা-ঘ্যাগ-রোগের-হোমিওপ্যাথিক-চিকিৎসা-15