আজকে আমরা আলোচনা করব হোমিওপ্যাথি সর্ম্পকে ভ্রান্ত ধারনা, কুসংস্কার সর্ম্পকে ও জানব কিছু প্রশ্নোত্তর।
সূচনা
আমরা অনেকেই অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করে আসছি, তাই আমরা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অ্যালোপ্যাথিক এর সাথে তুলনা করে আসছি। হোমিওপ্যাথিকের বৈশিষ্ঠ্য হল রোগীর চারিত্রিক ও মানষিক লক্ষন ভেদে রোগীর চিকিৎসা করা হয়।
আমরা কমবেশি প্রায় সবাই জানি যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গতানুগতিক চিকিৎসা ব্যবস্থার মত রোগের লক্ষনের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করে না, রোগের রোগীর লক্ষনের উপর ভিত্তি করে কাজ করে এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলেই চলে। এছাড়াও রোগের স্থায়ী নিরাময়, গতানুগতিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে তুলনামূলক খরচে রোগমুক্তি ইত্যাদি কারনে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অনেক জনপ্রিয়।
আর এই জনপ্রিয়তা ছাড়াও আছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অপ-প্রচার ও অযৌক্তিক আলোচনা ও সমালোচনা। আজ সেসব ‘আলোচনা ও সমালোচনা’ নিয়েই ক্ষুদ্র পরিসরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিক বিজ্ঞানসম্মত না
হোমিওপ্যাথিক বিজ্ঞানসম্মত না যথন ২০০ বছর আগে যখন হোমিওপ্যাথিকের জনক সামুয়েল হানেমান নিজেই নিজের দেহের উপর ঔষধ প্রয়োগ করে ঔষধের লক্ষন নির্ধারন করেন, সেসব পরীক্ষিত ঔষধ আজও ব্যবহার করা হয়, মানবদেহে পরীক্ষিত ঔষধগুলোকে আপনার অবৈজ্ঞানিক মনে হয়।
আপনারা ভাবেন হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অ্যালোপ্যাথিক এর মত ডিজিটাল ল্যাবে সুন্দর করে বানায় না, ঔষধ দামি না কেন, ঔষধ পানি বা ছোট বড়িতে দেয় কেন, ডাক্তারদের চেম্বার কেন এত্ত সুন্দর না এসব দেখেই আপনারা কিছুটা বিরুপ ধারনা পোষন করেন।
হোমিওপ্যাথির সাথে অ্যালোপ্যাথিক বা অন্য চিকিৎসা ব্যসস্থার সাথে তুলনা করাই যেতে পারে, বাট দুইটা এক হতে হবে এমনটা না।
হোমিওপ্যাথিকের জনক সামুয়েল হানেমান ছিলেন একজন নামকরা রসায়নবিদ ও নামকরা অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক। আপনারা কি জানেন হোমিওপ্যাথি আধুনিক একটি চিকিৎসা বিজ্ঞান ? নিউটনের তৃতীয় নাম্বার সূত্রের উপর হোমিওপ্যাথিক প্রতিষ্ঠিত । প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে ।
তিনি ১৭৭৮-১৭৭৯ সাল পর্যন্ত ছাত্র অবস্থাতেই ট্রানসেলভেনিয়ার গভর্নরের পারিবারিক চিকিৎসক ছিলেন। এছাড়া এসময় বাইরের রোগীও দেখতেন। কিন্তু এম.ডি ডিগ্রীধারী চিকিৎসক হিসেবে ১৭৮১ সালে তাম্রখনি অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ম্যান্সফিল্ড রাজ্যের হেটস্টেড শহরে সর্বপ্রথম চিকিৎসা পেশা শুরু করেন। ১৭৮১ সালের শেষ দিকে তিনি ম্যাগডিবার্গের নিকটবর্তী গোমেরন এ জেলা মেডিকেল অফিসার নিযুক্ত হন।
একজন আর্দশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রোগীর চারিত্রিক ও মানষিক লক্ষন অনুযায়ী চিকিৎসা করান
হোমিওপ্যাথির জনক মহাত্মা হ্যানিম্যান একশত’র বেশি ঔষধ Proving করেন যা মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। একেকটি ঔষধের লক্ষণ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যেমন- বেলেডোনা ঔষধে ১,৪৪০ (এক হাজার চারশত চল্লিশ) টি লক্ষণ তিনি বর্ণনা করেছেন।
বিশ্ববিখ্যাত হোমিওপ্যাথ জে. এইচ. ক্লার্ক তার মেটেরিয়া মেডিকা তিন খণ্ডবিশিষ্ট এবং আড়াই হাজার পৃষ্ঠা সংবলিত। অপর আরেকজন বিখ্যাত হোমিওপ্যাথ ডা. এইচ. সি. এলেনের Encyclopedia দ্বাদশ খন্ড, পৃষ্ঠা নয় হাজার।
বিখ্যাত হোমিওপ্যাথ কনস্টাইন হেরিং এর Guiding Soymptoms ১০ (দশম) খণ্ডে লিখিত এবং অজস্র লক্ষণ সংবলিত। কোনো মানুষের পক্ষে মেটেরিয়া মেডিকার শত শত লক্ষণ মুখস্থ করা সম্ভব নয় homeodigest
চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. হ্যানিম্যান তার বিশ্বখ্যাত অর্গানন অব মেডিসিন পুস্তকে উল্লেখ করেছেন, হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কাজ দুই ধরনের (১) রোগ সৃষ্টি করা ও (২) রোগ আরোগ্য করা। তিনি তার নিজের ও ৫০ জন সহকর্মীর সুস্থ দেহে প্রায় ১০০টি ঔষধ স্থূলমাত্রায় বার বার প্রয়োগ করে পরীক্ষণ করেন। তখন এসব ঔষধের লক্ষণ তাদের ওপর প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো সংগ্রহ করে হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় এবং রেপার্টারি গ্রন্থে লিখে রাখেন। যাতে চিকিৎসার সময় এগুলো ব্যবহার করা যায়।
অপরদিকে রোগী চিকিৎসার সময় হ্যানিম্যান রোগীর রোগ লক্ষণের সদৃশ লক্ষণ সম্পন্ন ঔষধ সূক্ষ মাত্রায় প্রয়োগ করে রোগীকে আরোগ্যর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৭৯০ সালে আবিষ্কৃত তার এ চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হোমিওপ্যাথি। তিনি আরো প্রমাণ করেন যেকোনো ঔষধ সুস্থ মানুষের ওপর যে রোগ লক্ষণ সৃষ্টি করে তা সৃদশ লক্ষণের রোগীকে আরোগ্য করতে পারে। অর্থাৎ
ঔষধের রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতার মাধ্যমেই এর রোগ আরোগ্যকারী ক্ষমতা নিহিত।
একইভাবে অন্য এক গবেষণায় ৪০ জন মাথা ঘোরা রোগীর ওপর গবেষক ক্লোজেন, বার্গম্যান ও বাটিলি এ রোগীদের লক্ষণানুসারে ককুলাস, কোনিয়াম ও পেট্টোশিয়াম ঔষধ দিয়ে পরীক্ষা করে সফল হন dailyinqilab
ঔষধ কাজ করেনা
লক্ষন অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন না করতে পারলে ঔষধ কাজ না করাটাই স্বাভাবিক। আর ঔষধ নির্বাচনও সহজ নয়, রোগীকে বিভিন্ন লক্ষন প্রশ্ন করতে হয়, আর এসব প্রশ্ন করার আগে প্রশ্ন জানতে হয়, উপরে তো পরে বুঝাই যায় যে হোমিওপ্যাথিকের মেটেরিয়া মেডিকা কত বিশাল।
ঔষধ পানিতে বা বড়িতে কেন দেয়
লাখ টাকার প্রশ্ন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঔষধের পাওয়ার বা শক্তি বলে একটা ব্যাপার আছে, সূক্ষ্ম ও স্থূল মাত্রা। চিকিৎসায় ঔষধের পাওয়ার ১ লক্ষ পর্যন্তও আছে আবার পাওয়ার কমানোর জন্য মূল ঔষধ পানিতে বা ছোট বড়িতে মেশানো হয় পরে আবার ঐ পানি বা বড়ি থেকে ৪/৫ ফোটা/বড়ি থেকে ঐ ঔষধের সূক্ষ্ম মাত্রা বানানোয় হয় এবং লক্ষন ও কারন ভেদে প্রয়োগ করা হয়।
হোমিও ঔষধ খেলেই রোগ সেরে যাবে না। দক্ষ হোমিও চিকিৎসকের থেকে চিকিৎসা নিলেই আপনি রোগ মুক্তির আশা করতে পারেন। quora
যে হোমিও ডাক্তার রোগীকে দেখেন রোগীর ইতিহাস শোনেন, তার কাছে যাবেন। এক রোগের জন্য গেলেও অন্যসব রোগের লক্ষণগুলোকে গোপন করবেন না। কারণ, তাদের কাছে এক রোগের সাথে অন্য রোগের সম্পর্ক আছে। ঠিক ডায়াগোনসিস হলে, আর ডাক্তার ভালো হলে, এক ঔষধেই কাজ হবে। তবে আবারো বলি সব অসুখ সব ডাক্তারে কাজ হয় না। এটা এলোপ্যাথিতেও ঘটে। quora
নতুন ঔষধ প্রস্তুত ও প্রচলন এবং একজন অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক হয়ে নিজের ঔষধ নিজে প্রস্তুত করায় লিপজিকের অ্যালোপ্যাথি ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতারা হ্যানেমানের চরম বিরোধিতা করেন।
বলা যায় তারই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগ ভালো হলে প্লাজবো না হলে স্ক্যাম।
ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা
কিছু লোক আছে হোমিওপ্যাথিক পছন্দ করে না কারন তাদের ক্ষেত্রে ঔষধ কাজ করে নাই , রোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি ইত্যাদি (হোমিওপ্যাথিক অপছন্দ বা বিরোধিতা করার সামান্যতম যৌক্তিক কারন আছে ধরা যায়), আর কিছু লোক তারা জানেই না যে তারা কেন হোমিওপ্যাথিক পছন্দ করে না, এনামুল এর মত...
এনামুলঃ আয়মান সাদিকের ফাঁসি চাই
এক ব্যাক্তি ঃ কেন আয়মান সাদিকের ফাসি চান?
এনামুলঃ সবাই বলছে তাই আমিও বলছি।
তারা অন্যের কথা শুনে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত লাফায়।
এই আর্টিকেল কাউকে বা কোন চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ছোট বা হেয় করার উদ্দেশ্যে লেখা হয় নি, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে শুধু মাত্র কিছু ভ্রান্ত ধারনা ও অপ-প্রচারের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা করা হয়েছে।